মাসআলাঃ
রোযা রাখিবার উদ্দেশ্যে শেষ রাত যাহাকিছু খাওয়া হয়, তাহাকে সেহ্রী বলে। সেহ্রী খাওয়া সুন্নত । ক্ষুধা না থাকিলে অন্ততঃ ২/১ টি খোরমা বা অন্য কোন জিনিস খাইবে । কিছু না হইলেও একটু পানি পান করিবে । (ইহাতেও সুন্নত আদায় হইবে ।)
মাসআলাঃ
সেহ্রীর সময় যদি কেহ সেহ্রী না খাইয়া মাত্র (এক মুষ্টি চাল পানি দিয়া খায় বা) একটি পান খায়, তাহাতেও সেহ্রী খাওয়ার সওয়াব হাছেল হইয়া যাইবে ।
মাসআলাঃ
সেহ্রী যথাসম্ভব দেরী করিয়া খাওয়া ভাল, এত দেরী করা উচিত নহে যাহাতে ছোবহে্ ছাদেক হইবার আশংকা হয় এবং রোযার সন্দেহ আসিতে পারে ।
মাসআলাঃ
যদি সেহ্রী খুব জল্দী খায় ; কিন্তু তাহার পর পান, তামাক, চা, পানি ইত্যাদি অনেকক্ষন পর্যন্ত খাইতে থাকে, ছোব্হে ছাদেক হওয়ার অল্প পূর্বে কুল্লি করিয়া ফেলে, তবুও দেরী করিয়া খাওয়ার সওয়াব পাইবে । ইহার হুকুমও দেরী করিয়া খাওয়ার হুকুম । (সেহ্রী খাওয়ার আসল সময় সূর্যাস্ত হইতে ছোবহে্ ছাদেক পর্যন্ত যে কয় ঘন্টা হয় তাহার ছয় ভাগের শেষ ষষ্ঠ ভাগ । যদি কেহ ইহার পূর্বে ভাত ইত্যাদি খায়, কিন্তু চা, পান ইত্যাদি এই শেষ ষষ্ঠাংশে করে । তবে তাহাতেও মুস্থাহাবের সওয়াব হাছেল হইবে।)
মাসআলাঃ
যদি রাত্রে ঘুম না ভাঙ্গে এবং সেই জন্য সেহ্রী খাইতে না প্রে, তবে সেহ্রী না খাইয়া রোযা রাখিবে । সেহ্রী না খাওয়ার কারনে রোযা ছাড়িয়া দেওয়া বড়ই কাপুরুষতার লক্ষন এবং বড়ই গোনাহ্র কাজ ।
মাসআলাঃ
যে পর্যন্ত ছোবহে্ ছাদেক না হয় অর্থাৎ, পূর্বদিকে সাদা বর্ণ না দেখা যায়, সে পর্যন্ত সেহ্রী খাওয়া দুরুস্ত আছে । ছোবহে্ ছাদেক হইয়া গেলে আর কিছুই খাওয়া দাওয়া দুরুস্ত নহে ।
মাসআলাঃ
যদি কেহ দেরীতে ঘুম হইতে উঠিয়া ‘ এখনও রাত আছে, ছোবহে্ ছাদেক হয় নাই,’ এই মনে করিয়া সেহ্রী খায়, পরে জানিতে পারে যে, ঐ সময় রাত ছিল না, তবে ঐ রোযা ছহীহ্ হইবে না, ঐ রোযার পরিবর্তে আর একটি রোযা ক্বাযা করিতে হইবে ; কাফ্ফারা দিতে হইবে না । কিন্তু ঐ দিনেও পানাহার করিতে পারিবে না । এইরূপ যদি সূর্য ডুবিয়া গিয়াছে, এই মনে করিয়া ইফ্তার করিয়া ফেলে এবং পরে জানতে পারে যে, সূর্য ডুবে নাই, তবে ঐ রোযা ছহীহ্ হইবে না । ঐ রোযার ক্বাযা করিতে হইবে ; কাফ্ফারা দিতে হইবে না । অবশ্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবশিষ্ট সময়টুকুতে কিছুই পানাহার করিতে পারিবে না ।
মাসআলাঃ
দেরী করিয়া উঠিয়া যদি সন্দেহ হয় যে, ছোবহে্ ছাদেক হইয়া গিয়াছে, তবে ঐ সময় কিছু খাওয়া দাওয়া মাক্রুহ । ওইরুপ সন্দেহ র সময় কিছু খাইলে গোনাহ্গার হইবে এবং রোযা ক্বাযা করিতে হইবে । কিন্তু এক্কিনীভাবে জানিতে পারে যে, ছোবহে্ ছাদেক হয় নাই, তবে রোযার ক্বাযা করিতে হইবে না । আর যদি কিছু ঠিক করিতে না পারে সন্দেহই থাকিয়া যায়, তবে ক্বাযা ওয়াজিব নহে, কিন্তু ক্বাযা রাখা ভাল ।
মাসআলাঃ
যখন নিশ্চিতরুপে জান যায় যে, সূর্য অস্ত গিয়াছে তখন আর দেরী না করিয়া সীঘ্রই ইফ্তার করা মুস্তহাব । দেরী করিয়া ইফ্তার করা মাকরুহ্।
মাসআলাঃ
আবরের (মেঘের) দিনে কছু দেরী করিয়া ইফ্তার করা ভাল । শুধু ঘড়ি ঘন্টার উপর নির্ভর করা ভাল নয় । কারণ, ঘড়ি ঘন্টাও প্রায় সময় ভুল হয় । অতএব, আবরের দিনে যতক্ষণ ঈমানদার ব্যক্তির দিলে সূর্য অস্ত গিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য না দেয়, ততক্ষণ ইফ্তার করিবে না । কাহারও আযানের উপরও পূর্ণ নির্ভর করা উচিত নহে । কারণ, মোয়ায্যেনেরও ভুল হইতে পারে । কাজেই ঈমানদারের দিলে গাওয়াহী না দেওয়া পর্যন্ত ছবর করাই ভাল । ওয়াক্ত হইল কি না সন্দেহ হইলে ইফ্তার করা দুরুস্ত নাই ।
মাসআলাঃ
খোরমার দ্বারা ইফ্তার করা সবচেয়ে উত্তম । খোরমার অভাবে অন্য কোন মিষ্টি জিনিস দ্বারা এবং তদভাবে পানি দ্বারা ইফ্তার করা ভাল । কেহ কেহ লবণ দিয়া ইফ্তার করাকে সওয়াব মনে করে । এই আকীদা ভুল ।
মাসআলাঃ
যে পর্যন্ত সূর্যাস্ত সম্বন্ধে কিছু মাত্র সন্দেহ থাকে, সে পর্যন্ত ইফ্তার করা জায়েয নহে ।
তথ্যসূত্র
বেহেস্তী জেওর (লেখকঃ মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ)
0 comments:
Post a Comment