লাকসাম মিডিয়া গ্যালারী

#htmlcaption1 লাকসাম মাল্টি-মিডিয়া হাউস লাকসাম মাল্টি-মিডিয়া হাউস লাকসাম মাল্টি-মিডিয়া হাউস lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected lakshamlive Stay Connected

Wednesday, 7 June 2017

নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী 


নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী

। 
জন্ম ও বংশ পরিচয়: ১৭১৩ খ্রি: দিল্লীর সম্রাট শাহ আলম বাহাদুর শাহ এর রাজত্বকালে সম্রাট তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রীর স্বামী আববাসীয় খলিফাদের বংশধর শাহাজাদা আব্দুল আজীজের পুত্র শাহাজাদা আমীর মির্জা আগোয়ান খান ওরফে জাহান্দার শাহকে এক বিরাট সৈন্য বাহিনীসহ ত্রিপুরাতে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা আনয়ন করার জন্য প্রেরণ করেন। শাহাজাদা আগোয়ান খান তাঁর পুত্র শাহজাদা আমীর মির্জা হুমায়ূন খানকে সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং ত্রিপুরায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এ অঞ্চলের মনোরম জলবায়ুতে আকৃষ্ট হয়ে মির্জা আগোয়ান খান সুদীর্ঘকাল এখানে অবস্থান করেন। মির্জা আগোয়ান খান দিল্লী ফিরে চলে গেলেও তাঁর পুত্র শাহাজাদা আমীর মির্জা হুমায়ূন খান তাঁর পিতার ত্রিপুরাস্থ বসতিতেই বসতি স্থাপন করেন এবং তাঁর নাম অনুসারে সেই মৌজার নাম রাখেন হুমায়ূনাবাদ। তাঁর পিতার অনুরোধে দিল্লীর সম্রাট হুমায়ূনাবাদ ও তৎসংলগ্ন অন্যান্য অঞ্চল এর জমিদারি তাঁকে প্রদান করেন। আমীর মির্জা হুমায়ূন খান তাঁরপুত্র মাসুম খান ও তাঁরপুত্র আবদুল মোতাহার খান পর্যন্ত আগোয়ান খান এর স্থাপিত চান্দিনা থানার মহিচাইলেই তাঁদের বসতি ছিল। এরপর এই পরিবারটি লাকসামের পশ্চিম গাঁয়ে বসতি স্থাপন করেন। এই পশ্চিম গাঁয়ে অবস্থান কারি মোতাহার খান-এর পুত্র সুলতান খান ওরফে গোরাগাজি চৌধুরী তাঁরপুত্র হোসেন আলী চৌধুরী গাজি শাহেদার অন্যতম বংশধর মুজাফফর গাজির কন্যা মায়মুনা বিবি ওরফে ময়না বিবিকে বিবাহ করেন। তাঁদেরই দুই পুত্র আশ্রাফ আলী চৌধুরী ও আহম্মদ আলী চৌধুরী। আর দুই কন্যা আফিয়া চৌধুরাণী ও আমেনা চৌধুরাণী। উক্ত আহম্মদ আলী চৌধুরীই নওয়াব ফয়জুন্নেছার চৌধুরাণীর পিতা। 
এবার জানা যাক ফয়জুন্নেছার মাতৃকুলের কথানোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ভুলুয়া। এই ভুলুয়ার অন্তর্গত ধলীয়া গ্রামে মিনা মাহতাব নামে এক সম্ভ্রান্ত বংশীয় ব্যক্তি ছিলেন। ত্রিপুরার রাজাদের খাজনা আদায়কারী গোমস্তা পাইক পেয়াদাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মিনা মাহতাব প্রতিরোধ গড়ে তুলেন ত্রিপুরার মহারাজ মিনা মাহতাবকে শায়েস্তা করার জন্য লাঠিয়াল বাহিনী পাঠালে তুমুল সংঘর্ষের পর দাদরা এলাকায় মহারাজার জমিদারির অবসান ঘটে। মিনা মাহতাবের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে মুর্সিবাদের নবাব দাদরার জমিদারি মিনা মাহতাবের নামে পত্তন ঘটে এবং তাঁকে চৌধুরী খেতাব দান করেন। মিনা মাহতাব জনদরদি জমিদার হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। মিনা মাহতাব-এর পুত্র ফজিল মুহাম্মদ চৌধুরীর শেষ বংশধর বেজু মিয়া চৌধুরী। এরই ভগ্নিপতি জমিদার আমজাদ চৌধুরী ওরফে ডেঙ্গুমিয়া চৌধুরী এই আসাদ চৌধুরীরই প্রথম কন্যা আরফান্নেছা চৌধুরী। হোমনাবাদের জমিদার আহম্মদ আলী চৌধুরী ও ভুলুয়ার জমিদার আসজত চৌধুরীর কন্যা আরফান্নেছা চৌধুরী জ্যেষ্ঠ কন্যা সমত্মান হলেন ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী। আনুমানিক ১৮৩৪ খ্রি: ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী লাকসামের পশ্চিমগাঁওস্থ পৈত্রিক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন: মোগল সম্রাট শাহ আলমের শাসনকালে শাহজাদা জাহান্দরের (আমির মির্জা আগেয়ান খা)র পুত্র গুমায়ুন খাঁ হোমনাবাদ পরগণার জমিদারি লাভ করেন তাঁরই অধস্তন ষষ্ঠ বংশধর আহম্মদ আলী চৌধুরী পিতা জমিদার নন্দিনী আরফান্নেছা মাতার তৃতীয় সন্তান ফয়জুন্নেছা। বড় দুই ভাই ইয়াকুব আলী চৌধুরী ও ইউসুফ আলী চৌধুরী। ছোট বোন লতিফান্নেছা চৌধুরাণী। জমিদার বাড়ির আরাম আয়েশে ফয়জুন্নেছা বড় হন আববা-আম্মা, বড় দুই ভাই, ছোট এক বোন আর অসংখ্য দাস-দাসী পরিবৃত্ত সংসারে। ফয়জুন্নেছার জমিদার পিতা বাল্যকাল থেকে পড়াশোনার প্রতি মেয়ের আগ্রহ লক্ষ্য করে তাঁর জন্য উপযুক্ত গৃহ শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ফয়জুন্নেছার মাতা ও জমিদার নন্দিনী এবং জমিদার পত্নী ছিলেন বলে তিনি ফয়জুন্নেছাকে সেভাবেই গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছিলেন। আদুরে কন্যা হলে যা হয়, ফয়জুন্নেছাও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। তিনি একটু চঞ্চলমতি ছিলেন। ক্রীড়া কৌতুকে তিনি মেতে থাকতেন সমবয়সীদের সাথে। তবে তিনি দায়িত্ব সচেতন পিতামাতার সন্তান ছিলেন। তাই শুধু হেসে খেলে তাঁর বাল্যকাল কাটেনি। যথাসময়ে পিতামাতা তাঁর বিদ্যাশিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ফয়জুন্নেছার গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হন ওস্তাদ তাজউদ্দিন সাহেব। বুদ্ধিমতী মাতার উপযুক্ত কন্যা ছিলেন তিনি। তাই খেলাধূলার ফাঁকে ফাঁকেই লেখাপড়াটাও সমাধা করতেন। তিনি খেলাধূলার প্রতি তাঁর প্রবল আকর্ষণের কথা এভাবেই বর্ণনা করেছেন।
‘আমি বাল্যাবস্থায় সমবয়সীদিগের সহিত ক্রীড়া কৌতুকে নিমগ্ন থাকিয়াও যথাসময়ে শিক্ষক সন্নিধানে অধ্যয়নাদি সম্পন্ন করিতাম।
বোধ করি তাঁর গৃহশিক্ষক ওস্তাদ তাজউদ্দিন সাহেব খেলাধূলার প্রতি তাঁর বেশি আকর্ষণকে বাধাগ্রস্ত না করে কৌশলে খেলাধূলার ফাঁকে তাঁর কাছ থেকে লেখাপড়াটুকু আদায় করে নিতেন। যে সমাজ ব্যবস্থার মাঝে ফয়জুন্নেছা বেড়ে উঠেছেন সে সময়ে সুকঠোর পর্দা প্রথার বেড়া ডিঙিয়ে লেখাপড়া শেখার সুযোগ মেয়েদের ছিল না। একটি বিষয় লক্ষণীয় ফারসি কিংবা উর্দু ছিল সে সময়ে শরীফ পরিবারের ভাষা। তাই সেই সময়ে ফারসি বা উর্দু জানা নারী শিক্ষক পাওয়া ছিল দুষ্কর। তাই ফয়জুন্নেছাদের পরিবারের ঐতিহ্য ও প্রচলিত প্রথা থেকে কিছুটা ভিন্নখাতে প্রবাহিত হয়েছিল। পুরুষ শিক্ষকের সন্নিধানে বিদ্যা শিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন ফয়জুন্নেছা এবং তাঁদের পারিবারিক ভাষা হিসেবে শুধু আরবি, ফারসিই নয়, বাংলা ভাষা চর্চাও হত। ওস্তাদ  তাজউদ্দিন  সাহেব ফয়জুন্নেছাকে শুধু আরবি ফারসিই পড়ান নি, একই সাথে বাংলা ও সংস্কৃত চর্চায়ও তিনি হাতেখড়ি দিয়েছিলেন। এভাবে পরিবর্তিত যুগ অনুযায়ী গড়ে উঠার সুযোগ পান ফয়জুন্নেছা নিজস্ব  পারিবারিক মুক্ত আবহাওয়ার কারণে। ফয়জুন্নেছার উপর ওসত্মাদ তাজউদ্দিনের প্রভাব ছিল সদূরপ্রসারী। পরবর্তীকালে ফয়জুন্নেছার  মধ্যে জ্ঞানের যে পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেছিল তার মূলে ছিল ওস্তাদ তাজউদ্দিনের প্রকৃত শিক্ষক সুলভ একাগ্রতা ও কুসংস্কারমুক্ত সার্বিক জ্ঞান দানের প্রয়াস। এই সাথে যুক্ত হয়েছে ফয়জুন্নেছার একাগ্রতা ও নিষ্ঠা।

পিতার অকাল মৃত্যু: প্রাচুর্যেই জন্মেছিলেন জমিদার তনয়া ফয়জুন্নেছা। জীবনের শুরুতেই প্রচন্ডভাবে হোঁচট খেলেন ফয়জুন্নেছা। বাল্যকালেই তাঁর জীবনে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। অকালেই তিনি পিতৃহারা হলেন। ১৮৪৪ খ্রি: সেপ্টেম্বর মাসে ফয়জুন্নেছার পিতা ইহধাম ত্যাগ করেছেন। কি নিদারুন শোকাবহ ঘটনা। ফয়জুন্নেছা তখন ১০ বছরের বালিকা মাত্র, আর তখনই এমন বিপর্যয়। বাল্যকাল শেষ না হতেই তাঁর পিতৃ বিয়োগ ঘটল। এই মৃত্যু ফয়জুন্নেছার জীবনে যে কত বড় মর্মান্তিক ঘটনা তা সহজেই অনুমেয়। এতবড় সংসার, বিশাল জমিদারি এখন কে চালাবে?  তার হাল ধরার মত কোন সন্তানই তখনো সক্ষমতা লাভ করেনি। বিধাতা  নিয়ে গেলেন জমিদার আহাম্মদ আলীকে। সমগ্র পরিবারটির জন্যই এটি একটি নিদারুন দুর্ঘটনা, বিশেষ করে পিতার পরম স্নেহের দুলালী দুর্ভাগিনী ফয়জুন্নেছার জন্য এ এক অসহনীয় বিপর্যয়। এমন সময় তাঁদের পিতৃ বিয়োগ ঘটলো ভাই বোনদের কেউ তখনো সাবালক হননি।  ভাই বোন সবাই নাবালক। এমন অবস্থায় নাবালক সন্তানদের পিতা দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। বিধাতা বুঝি এমনি করে তাঁর বান্দাদেরকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলে পরীক্ষা করে নেন। ফয়জুন্নেছার পিতা জমিদার আহাম্মদ আলী চৌধুরীর কি হয়েছিল? এবং তাঁর অকাল মৃত্যুর কারণ কি এ সম্পর্কে ফয়জুন্নেছা নিজেই তার বর্ণনা দিয়েছেন।
পিতা যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হইলেন, সহস্র মুদ্রা ব্যয় করিয়া দেশ বিদেশ হইতে বহু সংখ্যক বিজ্ঞ চিকিৎসক আনয়ন পূর্বক চিকিৎসা করাইলেন কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না। আয়ুষ্কাল পূর্ণ হইলে কেহই কাহাকে রাখিতে পারে না। পিতা আমাদিগকে শোক সাগরে ভাসাইয়া আনন্দে স্বর্গপুরে গমর করিলেন। আমরা এবং প্রজাপুঞ্জ সকলেই বহুদিন শোক করিলাম।
ফয়জুন্নেছার পিতার মৃত্যুতে তাঁর এইরূপ উক্তিতে তিনি নিজেকে অদৃষ্টবাদী হিসেবে তুলে ধরেছেন। অদৃষ্টকে তিনি মেনে নিলেও অদৃষ্টের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য বাল্য বয়সেই যে দৃঢ়চেতা হয়েছিলেন তা তাঁর পরবর্তী জীবনের দিকে দৃষ্টি দিলে গভীরভাবে  পর্যবেক্ষণ করা যায়। পিতার এই অকাল মৃত্যু স্বভাবতই ফয়জুন্নেছার সমগ্র পরিবারটির উপর আঘাত হানে। অকস্মাৎ এই মৃত্যুতে সর্বাধিক ক্ষতির শিকার হন কৈশোর পার না হওয়া ফয়জুন্নেছা। পিতার এই অকাল মৃত্যুর কারণে শুরু হয় তাঁর জীবনে অপরিসীম দুঃখ ও বিড়ম্বনার জীবন। এই দুঃখ কষ্টই ফয়জুন্নেছাকে কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে তাঁকে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে শেখায়। জীব সংগ্রামে তিনি হয়ে উঠেন এক অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধা। জীবনের শোককে হাতিয়ার করেই তিনি হয়ে উঠেন জীবন সংগ্রামের এক অনন্যা নারী।
গাজী চৌধুরীর বংশ পরিচয়: ইয়েমেনের অধিবাসী বিখ্যাত ব্যক্তি হোমনাবাদ পরগণার আদিম মুসলমান জমিদার সাধুবর গাজী সাহেদা। এ বংশের এক শাখার উত্তর পুরুষ নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী। আর অন্য শাখার ভাউকসারের জমিদার মোহাম্মদ গাজী চৌধুরী। জমিদার সাধুবর গাজী সাহেদার জমিদারির কর্মকান্ড পশ্চিমগাঁও থেকেই পরিচালিত হতো, তাঁর বাসস্থানও পশ্চিমগাঁয়েই ছিল। সাধুবর গাজী সাহেদার অধঃস্তন বংশধর দৌলত গাজী চৌধুরীর পুত্র জাফর গাজী চৌধুরী পর্যন্ত পশ্চিমগাঁয়েই বসবাস করতেন। জাফর গাজী চৌধুরীর পুত্র ইমাম বকস গাজী চৌধুরী তাঁর জমিদারির প্রাপ্য সম্পত্তি পৃথক করে নিয়ে পশ্চিমগাঁও থেকে সরে গিয়ে কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার ভাউকসারে বাড়ি পত্তন করেন। বখস গাজী চৌধুরীর পুত্র এনায়েত গাজী চৌধুরীর পুত্র হলেন মোহাম্মদ গাজী চৌধুরী।

বিবাহ ও সংসার জীবনঃ নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী ও মোহাম্মদ গাজী চৌধুরী উভয়েরই আদি পুরুষ সাধুবর গাজী সাহেদা। তাই তাঁরা পরস্পর আত্মীয় এবং পূর্ব পরিচিত। এই সূত্র ধরে মোহাম্মদ গাজী চৌধুরীর ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল। এই সুবাদে মোহাম্মদ গাজী চৌধুরী কিশোরী ফয়জুন দর্শনে তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে আত্মহারা হয়ে ফয়জুনকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে অপরিণত বয়সের অজুহাতে সে প্রস্তাব নাকজ হয়ে যায়। গাজী চৌধুরীর বিয়ের প্রস্তাব ফয়জুন্নেছার পরিবার কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় গাজী চৌধুরী পাগল প্রায় হয়ে যান। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এবং সন্তানের মঙ্গল কামনা করে গাজী চৌধুরীর পিতামাতা ত্রিপুরা আদালতের প্রধান উকিল বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার (সাবেক মহকুমা) সরাইল নিবাসী নাদেরজ্জামান মুন্সীর কন্যা নাজমুন্নেছার সাথে মোহাম্মদ গাজী চৌধুরীর বিবাহ পড়ান। এ বিয়েতে গাজী চৌধুরী সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাঁর মন সদা সর্বদা ফয়জুন্নেছার জন্য উচাটন ছিল। গাজী চৌধুরী ও নাজমুন্নেছার বিবাহিত জীবনের বার বছর অতিবাহিত হলেও নাজমুন্নেছা গাজী চৌধুরীকে সন্তানের মুখ দেখাতে ব্যর্থ হন। গাজী চৌধুরীও ফয়জুন্নেছাকে পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠেন। ইতোমধ্যে ফয়জুন্নেছার পিতা আহাম্মদ আলী চৌধুরী ইহধাম ত্যাগ করেছেন। শেষ পর্যন্ত ফয়জুন্নেছার বিধবা মাতা আরফান্নেছা গাজী চৌধুরীর নানা কূট কৌশলের কাছে পরাভূত হয়ে সতিনের ঘরে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজী হন। প্রথম স্ত্রীও বাধ্য হয়ে এ বিয়েতে রাজী হন। বাধ সাধলেন ফয়জুন্নেছার ভাইয়েরা। তারপর এই বলে অপোস রফা হলো যে ফয়জুন্নেছা গাজী চৌধুরীর বাড়ি অর্থাৎ যে বাড়িতে প্রথম স্ত্রী নাজমুন্নেছা আছেন সে বাড়িতে যাবেন না, তিনি পশ্চিমগাঁও-এ পিত্রালয়ে অবস্থান করবেন। শর্ত অনুযায়ী গাজী চৌধুরী ও ফয়জুন্নেছার জীবন সুখেই চলছিল। এরই মধ্যে তাঁদের দু’টি কন্যা সন্তান জন্ম নিল আরশাদুন্নেছা ও বদরুন্নেছা। গাজী চৌধুরী এক কূট কৌশল করে জোৎস্না রাতে বজরায় করে দুই কন্যা সহ ফয়জুন্নেছাকে নিয়ে এলেন গাজী চৌধুরীর ভাউকসারের বাড়িতে। রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ফয়জুন্নেছা। এরপর গাজী চৌধুরীর কঠিন শর্তে বড় মেয়ে আরশাদুন্নেছাকে সতিনের কাছে রেখে পশ্চিমগাঁও ফিরে এলেন মায়ের কাছে।

বিবাহ ও সংসার জীবনঃ নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী ও মোহাম্মদ গাজী চৌধুরী উভয়েরই আদি পুরুষ সাধুবর গাজী সাহেদা। তাই তাঁরা পরস্পর আত্মীয় এবং পূর্ব পরিচিত। এই সূত্র ধরে মোহাম্মদ গাজী চৌধুরীর ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল। এই সুবাদে মোহাম্মদ গাজী চৌধুরী কিশোরী ফয়জুন দর্শনে তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে আত্মহারা হয়ে ফয়জুনকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে অপরিণত বয়সের অজুহাতে সে প্রস্তাব নাকজ হয়ে যায়। গাজী চৌধুরীর বিয়ের প্রস্তাব ফয়জুন্নেছার পরিবার কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় গাজী চৌধুরী পাগল প্রায় হয়ে যান। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এবং সন্তানের মঙ্গল কামনা করে গাজী চৌধুরীর পিতামাতা ত্রিপুরা আদালতের প্রধান উকিল বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার (সাবেক মহকুমা) সরাইল নিবাসী নাদেরজ্জামান মুন্সীর কন্যা নাজমুন্নেছার সাথে মোহাম্মদ গাজী চৌধুরীর বিবাহ পড়ান। এ বিয়েতে গাজী চৌধুরী সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাঁর মন সদা সর্বদা ফয়জুন্নেছার জন্য উচাটন ছিল। গাজী চৌধুরী ও নাজমুন্নেছার বিবাহিত জীবনের বার বছর অতিবাহিত হলেও নাজমুন্নেছা গাজী চৌধুরীকে সন্তানের মুখ দেখাতে ব্যর্থ হন। গাজী চৌধুরীও ফয়জুন্নেছাকে পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠেন। ইতোমধ্যে ফয়জুন্নেছার পিতা আহাম্মদ আলী চৌধুরী ইহধাম ত্যাগ করেছেন। শেষ পর্যন্ত ফয়জুন্নেছার বিধবা মাতা আরফান্নেছা গাজী চৌধুরীর নানা কূট কৌশলের কাছে পরাভূত হয়ে সতিনের ঘরে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজী হনপ্রথম স্ত্রীও বাধ্য হয়ে এ বিয়েতে রাজী হন। বাধ সাধলেন ফয়জুন্নেছার ভাইয়েরা। তারপর এই বলে অপোস রফা হলো যে ফয়জুন্নেছা গাজী চৌধুরীর বাড়ি অর্থাৎ যে বাড়িতে প্রথম স্ত্রী নাজমুন্নেছা আছেন সে বাড়িতে যাবেন না, তিনি পশ্চিমগাঁও-এ পিত্রালয়ে অবস্থান করবেন। শর্ত অনুযায়ী গাজী চৌধুরী ও ফয়জুন্নেছার জীবন সুখেই চলছিল। এরই মধ্যে তাঁদের দু’টি কন্যা সন্তান জন্ম নিল আরশাদুন্নেছা ও বদরুন্নেছা। গাজী চৌধুরী এক কূট কৌশল করে জোৎস্না রাতে বজরায় করে দুই কন্যা সহ ফয়জুন্নেছাকে নিয়ে এলেন গাজী চৌধুরীর ভাউকসারের বাড়িতে। রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ফয়জুন্নেছা। এরপর গাজী চৌধুরীর কঠিন শর্তে বড় মেয়ে আরশাদুন্নেছাকে সতিনের কাছে রেখে পশ্চিমগাঁও ফিরে এলেন মায়ের কাছে।

মাতৃ বিয়োগঃ মায়ের সাথে চলছিল ফয়জুন্নেছার জীবন। এর কিছুকাল পর ১৮৫৫ সালে মাতৃবিয়োগ হলে ফয়জুন্নেছা পিতার জমিদারির দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন। অসাধারণ দৃঢ়চেতা এই নারী স্বামী বিচ্ছেদের দুঃখকে শক্তিতে পরিণত করে নিজেকে নিষ্ঠাবান সমাজসেবক প্রজা রঞ্জক জমিদার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর সুনাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। সমাজ সেবা নিজ জমিদারির সীমানা পেড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা সৌদি আরব পর্যন্ত বিস্তৃত হলো।

পতি বিয়োগঃ ১৮৮৯ সাল এপ্রিল মাস। পশ্চিমগাঁওয়ে ফয়জুন্নেছার নিকট একটি খবর আসে। মোহাম্মদ গাজী চৌধুরী তঁর ভাউকসার জমিদার বাড়িতে অসুস্থ এবং মৃত্যু শয্যায়। এ খবর মুহূর্তের মধ্যে ফয়জুন্নেছাকে বিচলিত করে তুলে। শত হোক গাজী চৌধুরী তাঁর স্বামী, দেখা সাক্ষাৎ না থাকলেও তো ফয়জুন্নেছা তাঁরই ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। গাজী চৌধুরী এই ধরাধাম থেকে চির বিদায় নেওয়ার প্রহর গুনছেন। ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল দুর্জয় অভিমান ধরে রাখা এক সুকঠিন পণ। হুকুম হলো সাজাও বজরা। এক অন্ধ দ্বন্দ্বে দুলছে মন, গাজী চৌধুরীকে জীবিত পাব তো? বজরা এসে ভিড়ল ভাউকসার জমিদার বাড়ির ঘাটে। ভাউকসার জমিদার বাড়ির ভিতর থেকে গাজী চৌধুরীর পাইক, বরকন্দাজ এসে বজরার যাত্রী ফয়জুন্নেছাকে জানিয়ে দিল আপনি এ বাড়ির মাটি স্পর্শ করতে পারবেন না, এ গাজী চৌধুরীর নির্দেশ। নিজ স্বামীর বাড়িতে উঠতে গিয়েও বাধা পেলেন ফয়জুন্নেছা। এই বাধা উপেক্ষা করে স্বামী গাজী চৌধুরীর বাড়িতে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। কেননা তিনি শুধু জমিদারই ছিলেন না তিনি ছিলেন গাজী চৌধুরীর স্ত্রী। তার উপর তিনি ছিলেন এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের নারী। কোন লাভ লোকসানের হিসাব কষে নয় শুধু স্ত্রীর দাবীতে একবার স্বামীকে শেষ দেখা দেখতে আসা জমিদার ফয়জুন্নেছাকে ঘাটে অধিকক্ষণ আটকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। তিনি স্বামীর বাড়িতে উঠতেও সক্ষম হয়েছিলেন এবং গাজী চৌধুরীর দেখাও পেয়েছিলেন। এ এক মাহেন্দ্রক্ষণ। অভিমানী দুই জমিদার আর জমিদার রইলেন না। মুহূর্তে তাঁরা দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটায়ে চির পরিচিত স্বামী-স্ত্রীতে রূপান্তরিত হয়ে গেলেন। গাজী চৌধুরীর মাথা কোলে নিয়ে বড় স্ত্রী নাজমুন্নেছা পাখা বুলাচ্ছিলেন মাথায়। গাজী চৌধুরী ইশারায় দ্বিতীয় স্ত্রী ফয়জুন্নেছাকে কাছে ডেকে তাঁর নিকট ক্ষমা চেয়েছিলেন। ফয়জুন্নেছার প্রতি গাজী চৌধুরীর শেষ কথা ছিল। ‘জীবনে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমাকে ক্ষমা করো।’ সে সাথে গাজী চৌধুরী তাঁর সম্পত্তির বাটোয়ারা দলিলও তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। যে দলিলে গাজী চৌধুরীর সম্পত্তিতে ফয়জুন্নেছার ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর গাজী চৌধুরী ইহলোকের যাত্রা সাঙ্গ করে অনন্তকালের যাত্রাপথে পাড়ি জমান।
জমিদার ফয়জুন্নেছাঃ পিত্রালয়ে ফিরে আসার পর শুরু হয় তাঁর সংগ্রাম ও সাধনার দিন। ১৮৫৫ সাল থেকে তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর জমিদারি দেখাশুনার দায়িত্ব তুলে নিতে হয় কাঁধে। এ কর্মতৎপরতার মাধ্যমে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন একজন সুদক্ষ, প্রজাহিতৈষী, শিক্ষানুরাগী, তেজস্বী ও বিচক্ষণ শাসক হিসেবে। ১৮৫৫ সালে তাঁর মাতৃ বিয়োগ ঘটে। মাতৃ বিয়োগের পর তিনি এক বিশাল মাতুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হন। সুব্যক্তিত্বের অধিকারী জমিদারি বিদ্যা ও বুদ্ধি দীপ্ততায়, বিচক্ষণতায় ও কর্মদক্ষতায় তিনি ছিলেন সবার ওপরে। জমিদারির কঠোর দায়িত্ব তিনি আজীবন মোড়ায় বসে এবং চটিজুতো পায়ে দিয়ে পালন করেন। তিনি নির্ভীকভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ফয়জুন্নেছা নিজকে নিবেদিত করেন জনসেবায়। জীবনের শেষ প্রান্তে তিনি ওয়ারিশদের প্রাপ্য অংশ বুঝিয়ে দেন। নিজ জমিদারিটি পরিণত করেন ‘ওয়াক্‌ফ’ সম্পত্তি হিসেবে। প্রজাদের মঙ্গলার্থে সমস্ত সম্পত্তির অর্থ ব্যয় করেন।



              নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী, প্রকাশনায়ঃ জেলা প্রশাসন, কুমিলস্না  ১৩                             ১৪  নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী, প্রকাশনায়ঃ জেলা প্রশাসন, কুমিলস্না
 ফয়জুন্নেছার প্রাত্যহিক জীবন: জমিদার ফয়জুন্নেছার সমগ্র জীবন ছিল নিয়মতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলার মধ্যে সুনিয়ন্ত্রিত। জমিদারি পরিচালনা ছাড়াও অবশ্য করণীয় আরো দু’টি প্রধান সাধনা তাঁর ছিল। একটি হলো- আল্লাহর এবাদত, দ্বিতীয়টি হলো সাহিত্য সাধনা। এই সাধনাদ্বয়ের মধ্যেই স্বামীসঙ্গ বঞ্চিত নারী ফয়জুন্নেছা তাঁর জীবনে শান্তি খুঁজে পেয়েছিলেন। জমিদারি পরিচালনা ও অপর দু’টিকে প্রত্যহিক রুটিনের নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে এক সূত্রে গেঁথে নিয়েছিলেন। তাঁর দৈনন্দিন জীবনের সুনিয়ন্ত্রিত কর্মসূচীটি ছিল-শীত গ্রীষ্ম নির্বিশেষে প্রতিদিন শেষ রাতে ওযু করে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন এবং ফজর পর্যন্ত কুরআন মজিদ তেলাওয়াত করতেন। অতঃপর ফজরের নামাজ আদায় করে আবার পবিত্র কুরআন মজিদ তেলাওয়াতে নিমগ্ন হতেন। এভাবে সকাল ৮টা পর্যন্ত পবিত্র কোরআন মজিদ তেলাওয়াত করে সামান্য কিছু নাস্তা গ্রহণ করতেন। অতঃপর জমিদারি দফতরে গিয়ে বসতেন। জমিদারির দফতরে গিয়ে প্রথমে মুসাফিরখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীকে আহবান করে মুসাফির তথা দরিদ্র অতিথিদের অভাব অভিযোগের বিষয় এক এক করে জিজ্ঞাসা করতেন। তাদের প্রত্যেকের অভাব অভিযোগসমূহ মেটাবার ব্যবস্থা করে তিনি জমিদারির খাতাপত্র নিয়ে বসতেন। এ সময়ে পর্দার অন্তরালে হতে তিনি আমলাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন ও তাদের উপদেশাবলী শুনতেন। এভাবে এগারটা পর্যন্ত কাজ চলত। বেলা এগারটার পর আমলাদের সকলকে বিদায় দিয়ে তিনি অন্তঃপুরে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে গোসল করতেন। তিনি অন্দর পুকুরে নিয়মিত সাঁতার কাটতে অভ্যস্থ ছিলেন। গোসল শেষে খানাপিনা সেরে পুনরায় জমিদারির কাজে আত্মনিয়োগ করতেন। এ কাজ চলত আছরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত। আছরের নামাজ শেষে যে অবকাশটুকু তিনি পেতেন তা ছিল তার সাহিত্য সাধনার জন্য নির্ধারিত। এভাবে অত্যন্ত নিয়ম নিষ্ঠার মধ্যে জীবন চালিয়েছিলেন বলেই একজন ন্যায়বতী প্রজাবৎসল, জনদরদি জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে ফয়জুন্নেছা সক্ষম হয়েছিলেন।
 ফয়জুন্নেছার প্রাত্যহিক জীবন: জমিদার ফয়জুন্নেছার সমগ্র জীবন ছিল নিয়মতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলার মধ্যে সুনিয়ন্ত্রিত। জমিদারি পরিচালনা ছাড়াও অবশ্য করণীয় আরো দু’টি প্রধান সাধনা তাঁর ছিল। একটি হলো- আল্লাহর এবাদত, দ্বিতীয়টি হলো সাহিত্য সাধনা। এই সাধনাদ্বয়ের মধ্যেই স্বামীসঙ্গ বঞ্চিত নারী ফয়জুন্নেছা তাঁর জীবনে শান্তি খুঁজে পেয়েছিলেন। জমিদারি পরিচালনা ও অপর দু’টিকে প্রত্যহিক রুটিনের নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে এক সূত্রে গেঁথে নিয়েছিলেন। তাঁর দৈনন্দিন জীবনের সুনিয়ন্ত্রিত কর্মসূচীটি ছিল-শীত গ্রীষ্ম নির্বিশেষে প্রতিদিন শেষ রাতে ওযু করে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন এবং ফজর পর্যন্ত কুরআন মজিদ তেলাওয়াত করতেন। অতঃপর ফজরের নামাজ আদায় করে আবার পবিত্র কুরআন মজিদ তেলাওয়াতে নিমগ্ন হতেন। এভাবে সকাল ৮টা পর্যন্ত পবিত্র কোরআন মজিদ তেলাওয়াত করে সামান্য কিছু নাস্তা গ্রহণ করতেন। অতঃপর জমিদারি দফতরে গিয়ে বসতেন। জমিদারির দফতরে গিয়ে প্রথমে মুসাফিরখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীকে আহবান করে মুসাফির তথা দরিদ্র অতিথিদের অভাব অভিযোগের বিষয় এক এক করে জিজ্ঞাসা করতেন। তাদের প্রত্যেকের অভাব অভিযোগসমূহ মেটাবার ব্যবস্থা করে তিনি জমিদারির খাতাপত্র নিয়ে বসতেন। এ সময়ে পর্দার অন্তরালে হতে তিনি আমলাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন ও তাদের উপদেশাবলী শুনতেন। এভাবে এগারটা পর্যন্ত কাজ চলত। বেলা এগারটার পর আমলাদের সকলকে বিদায় দিয়ে তিনি অন্তঃপুরে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে গোসল করতেন। তিনি অন্দর পুকুরে নিয়মিত সাঁতার কাটতে অভ্যস্থ ছিলেন। গোসল শেষে খানাপিনা সেরে পুনরায় জমিদারির কাজে আত্মনিয়োগ করতেন। এ কাজ চলত আছরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত। আছরের নামাজ শেষে যে অবকাশটুকু তিনি পেতেন তা ছিল তার সাহিত্য সাধনার জন্য নির্ধারিত। এভাবে অত্যন্ত নিয়ম নিষ্ঠার মধ্যে জীবন চালিয়েছিলেন বলেই একজন ন্যায়বতী প্রজাবৎসল, জনদরদি জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে ফয়জুন্নেছা সক্ষম হয়েছিলেন।
শিক্ষা বিস্তারে ফয়জুন্নেছাঃ ফয়জুন্নেছার জমিদারির অন্তর্গত ১৪টি মৌজায় তিনি ১৪টি প্রাথমিক মক্তব স্থাপন করে দিয়েছিলেন। মৌজা সমূহ হলো-১। সদর তালুক (সদর পশ্চিমগাঁও, নিজ বাড়ি), ২। সদর খাস (পশ্চিমগাঁওয়ে), ৩। ভাটার (লাকসাম জংশন স্টেশনের পাঁচ মাইল পূর্বে), ৪। মোহাম্মদগঞ্জ (লাকসাম থানার পূর্বে), ৫। ফোমগাঁও (লাকসাম থানার শেষ পশ্চিম প্রান্তে), ৬। কৃষ্ণপুর (লাকসাম থানার পূর্ব দক্ষিণে), ৭। মানিকমুড়া (নাথেরপেটুয়ার পূর্বে), ৮। কুমিল্লা উনিষা (দক্ষিণ চর্থা), ৯। ভাউকসার (বর্তমানে বরুড়া থানায়), ১০। বাংগড্ডা (চৌদ্দগ্রাম থানায়), ১১। খাড়ঘর (চৌদ্দগ্রাম থানায়), ১২। সিজিরিয়া (চৌদ্দগ্রাম থানায়), ১৩। বক্সগঞ্জ (নাঙ্গলকোট থানায়) ১৪। ছাতারপাইয়া (নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায়)।
নিজ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ বর্তমানে পশ্চিমগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বলে যে স্কুলটি দেখা যায় যা বর্তমানে উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত সেই স্কুলটি মূলত নওয়াব ফয়জুন্নেছা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নিজ গ্রামের শিশুদের প্রারম্ভকালীন পড়াশুনার অন্যতম কেন্দ্র।
দ্বীনিয়াত শিক্ষাঃ ফয়জুন্নেছা শিক্ষা বিস্তারে হাত দিয়ে প্রথমেই নিজ বাড়িতে দ্বীনিয়াত শিক্ষার শিক্ষালয় গড়ে তুলেছিলেন।    
         
পারিবারিক টোল থেকে হাইস্কুলঃ ফয়জুন্নেছার পূর্ব পুরুষদের একটি পারিবারিক টোল ছিল। টোলটি আগুনে পুড়ে গেলে সেখানে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাতার অনুরোধে কন্যা বদরুন্নেছা ৯৫ ডিসিমেল জমি দান করে ১৯০১ সালে এই জমিতে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই স্কুলটির নাম হয় বদরুন্নেছা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়। এই স্কুলটির সাথে ফয়জুন্নেছার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটি সংযুক্ত হওয়ায় স্কুলটির নাম হয় ফয়জুন্নেছা-বদরুন্নেছা যুক্ত হাইস্কুল। বর্তমানে এই নামেই আছে।

নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ঃ ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লা জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার পর ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে ফয়জুন্নেছা কুমিল্লা শহরে তাল পুকুরের পূর্ব পাড়ে ৫ একর ভূমি দান করে ইংরেজি মাধ্যমের এই স্কুলটি শুধুমাত্র মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য স্থাপন করেন। বর্তমানে এটি সরকারি স্কুল এবং কুমিল্লা জেলার মেয়েদের জন্য অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
নানুয়ার দীঘির পাড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ এছাড়াও ফয়জুন্নেছা কুমিল্লা শহরের নানুয়ার দিঘীর পশ্চিম পাড়ে স্কুল স্থাপন করেছিলেন। এই স্থানটিতে বর্তমানে শৈলরানী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় অবস্থিত। বর্তমানে ফয়জুন্নেছার প্রতিষ্ঠিত প্রাথমিক বিদ্যালয়টির কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজঃ ফয়জুন্নেছা নিজ বাড়ির সন্নিকটেই ডাকাতিয়া নদীর তীরে ফয়েজিয়া মাদ্রাসাটি স্থাপন করেছিলেন। এই মাদ্রাসাটি পরে ওল্ডস্কীম হয়ে নিউস্কীম মাদ্রাসায় রুপান্তরিত হয়। পরে এই মাদ্রাসাটি ইন্টারমেডিয়েট কলেজ হয়। পরে ডিগ্রী কলেজে উন্নীত হয়। এরপর ১৯৮২ সনে কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়।
প্রবাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ ফয়জুন্নেছা যে শুধু তাঁর নিজ জমিদারিতেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তা নয়। তিনি নিজ জমিদারির বাহিরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। নিজ দেশের সীমানা পেড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে স্কুলঃ যত দূর জানা যায় দেশের সীমানার বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কৃষ্ণনগর নদীয়াতেও তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন।
পবিত্র মক্কা মদিনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ তিনি পবিত্র হজ্জব্রত পালন করতে মক্কা শরীফ গিয়ে মক্কার মেছফালায় ‘মেছফালাহ মাদ্রাসা’ ও অপরটি ‘মাদ্রাসা ই সাওলাতিয়া’ প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন। মক্কার ২টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩০০ টাকা ও মদিনার একটি মাদ্রাসার জন্য ১০০ টাকা নিয়মিত সাহায্যের ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন।
পবিত্র মক্কা মদিনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ তিনি পবিত্র হজ্জব্রত পালন করতে মক্কা শরীফ গিয়ে মক্কার মেছফালায় ‘মেছফালাহ মাদ্রাসা’ ও অপরটি ‘মাদ্রাসা ই সাওলাতিয়া’ প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন। মক্কার ২টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩০০ টাকা ও মদিনার একটি মাদ্রাসার জন্য ১০০ টাকা নিয়মিত সাহায্যের ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন।
সেবামূলক প্রতিষ্ঠানঃ নওয়াব ফয়জুন্নেছা বহু সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নিজ জমিদারি এলাকায় ও এর বাহিরেও প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন।
লাকসাম থানা দাতব্য চিকিৎসালয়ঃ ১৮৯১ সালের ৮ ই আগস্ট তাঁর জমিদারির সদর পশ্চিমগাঁও সংলগ্ন দৌলতগঞ্জ বাজারের পশ্চিম অংশে এটি স্থাপিত করেন। এটি লাকসাম উপজেলা দাতব্য চিকিৎসালয় নামে বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে।
কুমিল্লায় জানানা হাসপাতালঃ ১৮৯৩ সালে স্বামী গাজী চৌধুরীর ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত দক্ষিণ চর্থায় তিনি এই হাসপাতালটি স্থাপন করেন। কুমিল্লা সদর হাসপাতালটি ১৯২৯ সালে গোমতী নদীর পাড় (গাংচর) হতে দক্ষিণ চর্থার আলা সাহেবের বাড়িতে (বর্তমান সদর হাসপাতাল) স্থানান্তরিত হলে ১০/৭/১৯২৯ তাং এ ফয়জুন্নেছার কন্যা বদরুন্নেছা এক হেবা দলিল এর মাধ্যমে সরকারকে হস্তান্তর করে ‘জানানা ওয়ার্ড’ নামে নামকরণ করে। ০৫/১২/২০০৪ সালে জানানা ওয়ার্ডটি ভেঙ্গে সরকার কর্তৃক পুনঃ নির্মাণ করে দিলে বর্তমানে তা ‘ফয়জুন্নেছা ফিমেল ওয়ার্ড’ নামে পুনঃস্থাপিত হয়েছে।
দীঘি ও পুকুর খননঃ ফয়জুন্নেছা তাঁর ১৪টি জমিদারি মৌজার ১১টিতে দীঘি কোথাও পুকুর খনন করে দিয়েছেন। পশ্চিমগাঁও এ তাঁরই নির্মিত মসজিদের পাশে মুসল্লিদের সুবিধার্থে একটি পুকুর ও পশ্চিমগাঁও-এ  চারঘাট বিশিষ্ট বিশাল আকারের গোল পুকুর খনন করে দিয়েছেন।
মসজিদ স্থাপনঃ পশ্চিমগাঁওয়ে নিজ জমিদার বাড়ির পাশে মোঘল স্থাপত্যকলায় সুদৃশ্য জামে মসজিদ নির্মাণ করেন।
মুছাফিরখানা স্থাপনঃ পশ্চিমগাঁওয়ে নবাব বাড়ির পুকুরপারে মুছাফিরখানা স্থাপন করেছিলেন।
পুল নির্মাণঃ লাকসাম সদর ও পশ্চিমগাঁও এর সংযোগের জন্য ডাকাতিয়া নদীর উপর ‘সাম্মির পুল’ স্থাপন করেন।
দেশের বাহিরে সেবাদানঃ ফয়জুন্নেছা দেশের বাহিরেও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও কার্যাদি করে গেছেন।
দেশের বাহিরে সেবাদানঃ ফয়জুন্নেছা দেশের বাহিরেও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও কার্যাদি করে গেছেন।
নহরে যোবায়দা পুনঃখননঃ ফয়জুন্নেছা ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে হজ্জব্রত পালন করতে মক্কা শরীফ গেলেও তিনি ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে হজ্জব্রত পালন করার কারণে এক বৎসর কাল মক্কায় অবস্থান করেন। সে সময় তিনি আববাসিয় খলিফা হারুন অর রশিদ এর স্ত্রীর নামীয় ‘যোবায়দা নহর’টি পুনঃখনন করে দিয়েছেন।
মক্কায় মুসাফিরখানা ‘রোবাত’ স্থাপনঃ তিনি মক্কায় যোবায়দা নহর পুনঃ খনন করেই ক্ষামত্ম হননি, তিনি মেছফালায় একটি মুসাফিরখানা ‘রোবাত’ স্থাপন করেছিলেন। এই স্থান দিয়ে আরাফাতগামী একটি রাসত্মা নির্মাণের কারণে এর বর্তমানে আর অস্তিত্ব নেই। নোয়াখালীর ক্বারী নুরুল হুদা এর সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।
পত্রপত্রিকায় পৃষ্ঠপোষকতাঃ তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘বান্ধব’ পত্রিকা, ‘মুসলমান বন্ধু’ ঢাকা প্রকাশ, সুধাকর ইত্যাদি পত্রিকা সমূহকে নিয়মিত পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।
সমকালীন সাহিত্যিকদের সাথে যোগাযোগঃ সমসাময়িক সাহিত্যিকদের সাথে তাঁর যোগাযোগ ছিল। আনন্দস্বামীর জামাতা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক দ্বিজদাস দত্ত, পন্ডিত পূর্ণচন্দ্র কাব্যতীর্থ, পন্ডিত রেণুধর তর্কতীর্থ এদের সাথে ফয়জুন্নেছার ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিল।
ফয়জুন পাঠাগারঃ ফয়জুন্নেছা তাঁর ‘নবাব ফয়জুন্নেছা’ হাউজ সংলগ্ন স্থানে গড়ে তুলেছিলেন ফয়জুন পাঠাগার। এই পাঠাগারের নিত্য দিন রুটিন মাফিক কয়েক ঘন্টা করে সাহিত্য সাধনা করতেন।
রূপজালাল রচনাঃ ফয়জুন্নেছার কাব্য সাধনার অমর সৃষ্টি ‘রূপজালাল’ কাব্যগ্রন্থ। তিনিই বাংলায় প্রথম মহিলা কবি যার কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। ফয়জুন্নেছার জীবনের হাসি, কান্না, সুখ, দুঃখের কাহিনী রূপক বর্ণনা এই কাব্যগ্রন্থ। ‘রূপজালাল’ ১৮৭৬ সালে ঢাকা গিরিশ মুদ্রাযন্ত্র থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হওয়ার পর ১০৮ বৎসর যাবৎ ‘রূপজালাল’ ঘুমিয়ে ছিল। এরপর ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লার এম.এ কুদ্দুস সাহেব বৃটিশ মিউজিয়াম থেকে উদ্ধার করে বাংলা একাডেমীর মাধ্যমে প্রকাশ করলে রূপজালাল সূর্যের মুখ দেখে। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমগাঁও-এ রূপজালাল প্রকাশনার শতবর্ষ পালিত হয়েছে। ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমী রূপজালাল পুনঃ প্রকাশ করেছে।
ফয়জুন্নেছার নওয়াব উপাধি লাভঃ একবার ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ ডগলাস একটি সমাজ কল্যাণমূলক কাজের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সরকার হতে টাকা প্রাপ্তি বিলম্ব বিধায় তিনি ফয়জুন্নেছার নিকট টাকা কর্জ চেয়েছিলেন। ফয়জুন্নেছা মিঃ ডগলাসকে যে অর্থ দিয়েছিলেন তার পরিমাণ এক লক্ষ টাকা হতে পারে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় ডগলাস-এর টাকা গ্রহণের পূর্বে অথবা ফেরৎ দিতে গেলে ফয়জুন্নেছা মিঃ ডগলাসকে বলেছিলেন ফয়জুন্নেছা যখন কাউকে অর্থ দেয় তা দান হিসেবেই দেয় তা কর্জ হিসেবে দেয় না। এ কথাটি মিঃ ডগলাসকে বিমোহিত করেছিল। তাই তিনি এ সংবাদটুকু ইংল্যান্ডের বানীর নিকট পৌছে দিয়েছিলেন। একজন মুসলিম নারী জমিদারের এই রূপ আচরণে মুগ্ধ হয়ে রানী ফয়জুন্নেছাকে বেগম উপাধিতে ভূষিত করলে তিনি সম্মানের সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেন। একটি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রানী ভিক্টোরিয়া এই তেজস্বী মহিলা জমিদারের কার্য্যকলাপ পরিদর্শনের জন্য এক প্রতিনিধি দল পশ্চিমগাঁও পাঠান। ইংল্যান্ড হতে এ দলটি পশ্চিমগাঁও পৌঁছে ফয়জুন্নেছার সাক্ষাত প্রার্থনা করলে তিনি তাঁদেরকে অতিথিশালায় অবস্থানের কথা বলে হাতিতে চড়ে যথারীতি জমিদারি পরিদর্শনে বের হন। প্রতিনিধি দলটি নবাব বাড়ি সংলগ্ন অতিথিশালা থেকে ফয়জুন্নেছার হাতিতে আরোহণের নান্দনিকতা দেখে তাঁর সাথে সাক্ষাত না করে ইংল্যান্ডে চলে গিয়ে রানী ভিক্টোরিয়াক
অনলাইন থেকে

0 comments:

Post a Comment